বেতনে কুলোচ্ছে না বলে নতুন একটা চাকুরীতে নিযুক্ত হতে বাধ্য হলাম। কী চাকরি- সেটা পরে বলছি, আগে বরং বলি কেন রাজি হলাম?
কী করবো - চুরি বিদ্যে তো শিখিনি! পরিবারের চার সদস্যের পেট চালানোর দায়িত্ব! খরচ কি কম? মাসান্তে টানাটানি। তাই সব ভেবে চিন্তে এই কাজটা স্ত্রী আর বড় ছেলের সঙ্গে শলা করে শুরু করলাম - যদি কিছু . . .
চাকরিটা পার্টটাইম, ফুল টাইম সম্ভব নয়। কারণ এখন আমি ফুল টাইম অন্যখানে এনগেজড।
গতবিষ্যুদবার রাতে "অফার" আসে। যথারীতি ফ্যামিলি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাতক্ষণিকভাবে 'একসেপ্টেড'। গতকাল ছিল প্রথম কর্মদিবস, আজ দ্বিতীয়।
খুবই দায়িত্বপুর্ন পদ। অবস্থা এমন - যে, আমার মুহুর্তের অসতর্কতায় এমন বিপত্তি ঘটে যেতে পারে - যা আমার জীবন দিয়েও পূরণ করা সম্ভব না। অবশ্য আমার জীবনটাই বোধকরি এ রকম। যতগুলো চাকুরিতেই এ যাবৎ জয়েন করেছি - সবখানেই কর্তৃপক্ষ এমন দায়িত্বে পদায়ন করেছেন - যেটা সেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে "অতীব দায়িত্বপূর্ণ" হিসেবে "মোহরকৃত" পদগুলোর একটি। তবে সবাই বেতনের বেলায় আমাকে যা দিয়েছে- তা আর বলে কি হবে! যাকে বলে একেবারে 'লবঢঙ্কা' । না হলে এই বয়সে কি কারো দায় পরে - আবার পার্ট টাইম চাকুরী!
আমার এই নতুন চাকরিটায় যোগ দেওয়াতে আমার সদ্য নার্সারীতে ভর্তি হওয়া বড় পুত্র বেজায় খুশি। তার এতটাই খুশি যে- গত দু'রাত চুমুতে আমার গাল 'লাল'! হবেই বা না কেন, স্কুল টিফিন, চিপস আর মাঝেমধ্যে যদি দু-এক পিস কেক-টেক এসে যায়! এমন সুযোগে কেউ কী খুশি না হয়ে পারে! পারেনা।
ভাবছিলাম এই কাজটায় বেতন যাই হোক, কিছুটা সময় কাটানো আর অন্তত যাওয়া-আসার খরচটা তো উঠবে! আজ বুঝলাম সে আশায় জল পড়েছে। এই মালিকও আমাকে খাঁটিয়ে নেবে আর নিজের এ পকেটের পয়সা জাস্ট ও পকেটে নেবে। আর বলবে এইযে- 'এই তো বেতন দিলাম, দিলাম তো!' আসলে কানাকড়িটিও দিবে না। আর ব্যাটা দিবেই বা কোত্থেকে? ওর যা অবস্থা! ওর তো আমার থেকেও 'দেউলিয়াদশা'!
যাইহোক, সিদ্ধান্ত নিলাম, বেতন না থাক; পায়ে হেঁটে হলেও প্রতিদিন ফুলটাইম কর্মস্থলে যাবার পথে রবি থেকে বিষ্যুদবার অবধি- হপ্তায় পাঁচ দিন করে তিন মিনিট দূরত্বের এই চাকুরিটাও আমি চালিয়ে যাব। যাব এই আশায় - যে আজ বেতন না পেলেও ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে সুদেমুলে সব আমার ছেলে অন্তত পাবে; কারণ চাকুরিটা যে আমার প্রানপ্রিয় ছেলে ববা'কে স্কুলে পৌঁছে দেয়া!
ফেব্রুয়ারী-১১, ২০১৬ ইং।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন