বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

সুখ


কামিনী রায়
========
নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?—
এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?
যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে
কেবলি কি নর জনম লয়?—
কাঁদাইতে শুধু বিশ্বরচয়িতা
সৃজেন কি নরে এমন করে’?
মায়ার ছলনে উঠিতে পড়িতে
মানবজীবন অবনী ‘পরে?
বল্ ছিন্ন বীণে, বল উচ্চৈঃস্বরে,—
না,—না,—না,—মানবের তরে
আছে উচ্চ লক্ষ্য, সুখ উচ্চতর,
না সৃজিলা বিধি কাঁদাতে নরে।
কার্যক্ষেত্র ওই প্রশস্ত পড়িয়া,
সমর-অঙ্গন সংসার এই,
যাও বীরবেশে কর গিয়ে রণ ;
যে জিনিবে সুখ লভিবে সেই।
পরের কারণে স্বার্থে দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণের সুখ ;
“সুখ” “সুখ” করি কেঁদনা আর,
যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
গেছে যাক ভেঙ্গে সুখের স্বপন
স্বপন অমন ভেঙ্গেই থাকে,
গেছে যাক্ নিবে আলেয়ার আলো
গৃহে এস আর ঘুর’না পাকে।
যাতনা যাতনা কিসেরি যাতনা?
বিষাদ এতই কিসের তরে?
যদিই বা থাকে, যখন তখন
কি কাজ জানায়ে জগৎ ভ’রে?
লুকান বিষাদ আঁধার আমায়
মৃদুভাতি স্নিগ্ধ তারার মত,
সারাটি রজনী নীরবে নীরবে
ঢালে সুমধুর আলোক কত!
লুকান বিষাদ মানব-হৃদয়ে
গম্ভীর নৈশীথ শান্তির প্রায়,
দুরাশার ভেরী, নৈরাশ চীত্কার,
আকাঙ্ক্ষার রব ভাঙ্গে না তায়।
বিষাদ—বিষাদ—বিষাদ বলিয়ে
কেনই কাঁদিবে জীবন ভরে’?
মানবের মন এত কি অসার?
এতই সহজে নুইয়া পড়ে?
সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে
পারনা মুছিতে নয়ন-ধার?
পরহিত-ব্রতে পারনা রাখিতে
চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬

শুভ নববর্ষ

'নিশি অবসান প্রায়
 পুরাতন বর্ষ হয় গত
আমি আজ এ ধূলিতলে
জীর্ণ জীবন করিলাম নত।।


বন্ধু হও শত্রু হও
যে যেখানে রও
ক্ষমা কর আজিকার মত
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।।'





কবিগুরুর ভাষা দিয়েই সবাইকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা . . . .


গৌতম হালদার

বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬

নন্দলাল

______ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'
নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'

সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভাবনা - না দূরভাবনা ?

কখনও কখনও মনে হয় -
আমি বোধহয় বড্ড ভুল সময়ে পৃথিবীতে এসেছি;
কিন্তু সময়টা যে আমিই বেছে নিয়েছি - এমন তো নয়!

তাহলে এর প্রায়শ্চিত্ত কী?

আমার আবার অসময়ে চলে যাওয়া?

তাহলে কী পুরনো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হবে?

না আবার নতুন কোন ভুলের সৃষ্টি হবে?
ভাবছি।

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার কোনো রকম হয়না। আবার ভালোবাসা হাজার রকম হয়, হাজার রকম ভালোবাসা হয় বড়দের ভালোবাসার মধ্যে; যাদের ভালোবাসা মূলত হয় স্বার্থোদ্ধারের কারণ হিসেবে। কিন্তু যাদের মধ্যে 'স্বার্থ' শব্দটারই কোনো অর্থ নেই, তাদের ভালোবাসাই মূলত এখন ভালোবাসার নিরেট আর প্রকৃত রূপ। তবে বর্তমান সমাজে- শুধু মাতৃস্নেহ ছাড়া - এই নিস্বার্থ ভালোবাসার উদাহরণ খুবই বিরল।
আজ আমি এক ভিন্ন রকম ভালোবাসার গল্প শোনাবো।
গতকাল, একটু আগে বাসায় পৌছেছিলাম বলে ববা'কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম কাছেই- গান শুনতে। তখন চলছিলো প্রিয়শিল্পী ফেরদৌস আরা'র গান। আমি গান শুনছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়। অল্প ক'জন দর্শক ছিলেন; বোধকরি সবাই গানপ্রিয়। সবাই গানপ্রিয় বলছি এই কারণে- কারণ যতক্ষণ শিল্পী গান গাইছিলেন; পুরো প্যান্ডেলে ছিলো পিন পতনের নিরবতা।
প্যান্ডেলে দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারগুলো সুদৃশ্য কাগজে ইংরেজি অক্ষরের ছাপ লাগিয়ে "জেন্টস"-"লেডিস"-"গেস্ট" চিন্হিত করা রয়েছে।

হয়তো প্রচার কম ছিলো কিংবা ছিলো না; তাই আশানুরূপ দর্শক হয় নি। আমরা ফাঁকা প্যান্ডেলে, চেয়ারগুলোর মধ্য থেকে প্রথমদিকে; একেবারে স্টেজের কাছাকাছি গিয়ে বসার সুযোগ নিয়ে গান শোনার সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাই নি। ববাও আমার পাশে বসে চুপটি করে উপভোগ করছিলো।
মধ্যিখানে অনুষ্ঠান বিরতিতে ববা'র আব্দার;
- বাবা একটা কথা বলবো?
- হা বলো- বাবা!
- তুমি রাগ করবা না তো!
- কী? কী বলবা - বলো না! চিপস? না- কোকোমোমো?
- না- ওসব না। আগে বলোনা তুমি রাগ করবা না!
সম্প্রতি এই বিষয়টা বেশ লক্ষ্য করি; ববা বড়দের মন বুঝে কথা বলে। আমার কিংবা তার মা'র যখন কোন কারণে মন খারাপ থাকে- তখন সে পারতপক্ষে কোন দাবি তোলে না। যখন বুঝে যে বাবা-মা'র মন খুব বেশি খারাপ; তা এতটাই খারাপ- যে খুব শীঘ্র স্বাভাবিক হয়তো হবে না; কিন্তু ততক্ষণে তার প্রয়োজনটি পূরণ না হলে ওটার আর প্রয়োজন থাকবে না; তখনই কেবল - এভাবে অনুমতি নিয়ে আমাদের সামনে তার প্রয়োজনটি পেশ করে।
ওর এই অনুমতি নেবার বিষয়টা, অনুমতি নেবার ধরনটা আমায় আহত করে, আমি পীড়িত হই, আমি দহিত হই। কারণ ওর যা বয়স, ওই বয়সে - আমি যদিও বাবার সামনে কোনো দাবি রাখতাম না, সব দাবি মায়ের কাছেই দাখিল করতাম; মা যথাসাধ্য মিটাতে সচেষ্ট থাকতো, তবু - আমার পুত্র যেন আমার কাছে কিছু চাইতে কোনো সংকোচ না করে -আমি সেটা চাই। চাই খুবই আন্তরিকভাবে- কারণ পিতা হিসেবে যে সময়টুকু, যে স্নেহটুকু, যে কর্তব্যটুকু সন্তানদের প্রাপ্য বলে আমি মনে করি; আমার শত আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও - আমি তা ওদেরকে দিতে পারি না। এজন্য আমি ওদের সামনে গেলে, বিশেষকরে এভাবে - যেভাবে অফিসে বস-অধস্তনদের অনুমতি নিয়ে- কেমন একটা দূরত্ব দূরত্ব্ভাব নিয়ে কাজ করতে হয়, সেইটা আমার আর আমার সন্তানদের মধ্যে আসুক- আমি চাইনা। আমি চাই পিতা-পুত্রের সম্পর্কটা হোক একটা "নিবিড় বন্ধুত্ব"। সেই কারণেই ওর এই কাতর আর শিশুকোমল বিনয়ে অনুমতি নেওয়া আমাকে অলক্ষ্যে নিরন্তর আঘাত করে।
আমি এই মানসিক আঘাত বুকে নিয়ে- প্রতিবার; যতবার এভাবে অনুমতি নিয়ে কিছু বলে- সাধ্যি থাক-না থাক; বলে থাকি;
- না বাবা, আমি রাগ করবো না। তুমি বলো।
- বাবা, এখন তো গান থেমে গেছে; চলোনা- একটু দেখে আসি - দোলনাটা ঠিক জায়গায় আনলো কিনা!
কদিন ধরেই- একুশে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠান, আজকের অনুষ্ঠান, এই সব কারণের কর্তৃপক্ষ দোলনাটা যেখানে থাকে- সেখান থেকে একটু সরিয়ে রেখেছে; যাতে বাচ্চাদের ছুটোছুটিতে অনুষ্ঠানের আয়োজনে কোনরূপ বিঘ্ন না ঘটে, তাই।
আমি অফডে পেলে ওর ভাষায় এই 'দোলনা', আসলে ওটা দোলনা নয়; মই বেয়ে ছ'পা উঠে বসে পড়া - আর মুহুর্তে পিছল কেটে নিচে নামা- আমিও ঠিক নাম জানি না; আমার ছেলে ওটাকেই দোলনা বলে; যাকগে, নাম যাই হোক- ববা'র কাছে ওটা যখন দোলনা-আমার কাছেও ওটা দোলনা-ই সই; যেটা চড়তে খুব পছন্দ করে- ওর এই ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে চেষ্টা করি।
গানের মুর্ছনায় আবিষ্ট থাকলেও বুঝলাম ববা'র প্রিয় খেলনা; দোলনা চড়ার ইচ্ছে হচ্ছে। তাই রাত যতই হোক; আমি এই ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে কার্পন্য না করে; ওকে নিয়ে দ্রুত দোলনার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম আর বললাম;
- তোমার বুঝি এখন দোলনা চড়তে ইচ্ছে হলো! ঠিক আছে, চলো বাবা দেখে আসি।
- না, বাবা শুধু দেখবো জায়গামতো ওটা এনেছে কী না? এখন উঠবো না, যদি ওটা ঠিক জায়গায় নিয়ে আসে- কাল ছুটির পর মা আর ভাইকে নিয়ে আসবো !
- ওহ! তাই বুঝি!
- হা।
- ওকে। চলো।
দোলনাটা যেখানে বসানো থাকে- সেটি গানের অনুষ্ঠানটি থেকে মিনিট দু'য়ের দূরত্বে হবে। একটা সরু পথ; দু'ধারে উচু দেয়াল; পথে আলোও অপর্যাপ্ত। আমরা হাত ধরাধরি করে হাঁটছি। হঠাত ববা হাত চেপে ধরে বলে উঠলো- থাক বাবা, আজ আর যেতে হবে না; চলো আমরা শেষ গানটা - কির্তন শুনি।
বুঝলাম এই রাস্তাটুকু ববা'র ভালো লাগেনি; সে জন-মানবহীন এই পথটুকু যেতে ভয় পাচ্ছে; জিজ্ঞেস করলাম - কেন বাবা? তুমি তো দোলনা চড়তে কাল ভাইকে নিয়ে আসবে বললে- তো!
- না বাবা, কেমন যেন অন্ধকার! ভয় ভয় করে না! তোমার কী ভয় করে না?
- না বাবা, কীসের ভয়? আমি আছি না! কত লোক তো ওখানে গান শুনছে! ভয় কিসের? তুমি চলো তো! বলে আমি ছেলেকে একটু সাহস যোগাতে চেষ্টা করলাম; আর তার অমতে, এক প্রকার জোড় করেই দোলনার কাছে নিয়ে যাই। আলো-আধারির অস্পষ্ট দৃষ্টিতে আমি দেখার আগেই ববা'র নজর পড়েছে - সেটি দূরেই পড়ে আছে;
- না, চলো বাবা, দোলনাটা আনে নি।
- কাল তাহলে কী ভাইকে নিয়ে আর একবার এসে দেখবে?
- না। কাল আসবোনা। তোমার সাথে একবারে ফ্রাইডে আসবো। এর মধ্যে অবশ্যই এনে ফেলবে।
ববা'র মন খারাপ, বুঝতে অসুবিধা হয়নি। আমি কষ্টটা লাঘব করার জন্য নিস্ফল চেষ্টা করি, বলি;
- বাবা, চলো চিপস খাই; তোমার একটা আর ভাইয়ের একটা। আমিও একটু খাবো।
- না, বাবা। তুমি তো কাল স্বপ্ন থেকে অনেকগুলো চিপস এনেছো, এখন আর লাগবে না। চলো আমরা কির্তন শুনি।
অনুষ্ঠান শেষে দ্রুত পায়ে বাসায় ফিরি। ববা'র ঘরে ঢোকামাত্র মাকে জিজ্ঞাসা- মা, ভাই কই? আমি ভাইয়ের জন্য একটা জিনিস এনেছি। মজার জিনিস। ভাই খুশি হবে। অনেক খুশি হবে!

কী জিনিস কিংবা ভাই কতটা খুশি হবে- না ভেবে আমি ববা'র চোখে রাজ্যের খুশি খুঁজে পেলাম আর ওর মায়ের পাশেই এখনও কথা না ফোঁটা ভাইকে দেখেই প্যান্টের পকেট থেকে আমার অলক্ষ্যে সযতনে ভাঁজ করে রাখা এক টুকরা সাদা 'A4' সাইজের কাগজ বেড় করে ভাঁজ খুলে হাতে দিলো; আমি আর ওর মা উদগ্রীব আগ্রহ নিয়ে চেয়ে দেখি কাগজখানিতে কিছু নেই; শুধু ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে "জিইএনটিএস"।
উপহারটা হয়তো অনেকের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ; তবে আমার কাছে ওটা ছিলো অনেক "বড় উপহার", যেটা শুধুমাত্র অপার্থিব স্নেহ আর নিস্পাপ ভালোবাসার এক সুনিপুন মিসেল ছাড়া অনুভব করা অসম্ভব; যার মধ্যে কোনো অর্থমূল্য নেই- তবে অমূল্য আবেদন লুকিয়ে আছে, আমি ভাইয়ের প্রতি দাদার এই ক্ষুদ্র উপহারে সেটাই খুঁজে পেয়েছি। তাই তো মনের অজান্তেই এক অব্যক্ত আনন্দের ছোঁয়ায় অনুভব করেছি চোখের কোনায় জল চলে এসেছে। আমি নিজেকে লুকোতে চেষ্টা করে শুধু বলেছি 'বাবা ভাইয়ের প্রতি এই ভালোবাসাটুকু সযতনে বাঁচিয়ে রাখিস, কোনো দুরত্ব যেন কোনোদিন তোদের মাঝে এসে দেয়াল গড়তে না পারে- আমরা তাহলেই খুশি হবো, খুব বেশি খুশি হব রে বাবা!'


ফেব্রুয়ারী-২৪, ২০১৬ ইং।



পার্ট টাইম জব


বেতনে কুলোচ্ছে না বলে নতুন একটা চাকুরীতে নিযুক্ত হতে বাধ্য হলাম। কী চাকরি- সেটা পরে বলছি, আগে বরং বলি কেন রাজি হলাম?

কী করবো - চুরি বিদ্যে তো শিখিনি! পরিবারের চার সদস্যের পেট চালানোর দায়িত্ব! খরচ কি কম? মাসান্তে টানাটানি। তাই সব ভেবে চিন্তে এই কাজটা স্ত্রী আর বড় ছেলের সঙ্গে শলা করে শুরু করলাম - যদি কিছু . . . 

চাকরিটা পার্টটাইম, ফুল টাইম সম্ভব নয়। কারণ এখন আমি ফুল টাইম অন্যখানে এনগেজড। 

গতবিষ্যুদবার রাতে "অফার" আসে। যথারীতি ফ্যামিলি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাতক্ষণিকভাবে 'একসেপ্টেড'। গতকাল ছিল প্রথম কর্মদিবস, আজ দ্বিতীয়। 

খুবই দায়িত্বপুর্ন পদ। অবস্থা এমন - যে, আমার মুহুর্তের অসতর্কতায় এমন বিপত্তি ঘটে যেতে পারে - যা আমার জীবন দিয়েও পূরণ করা সম্ভব না। অবশ্য আমার জীবনটাই বোধকরি এ রকম। যতগুলো চাকুরিতেই এ যাবৎ জয়েন করেছি - সবখানেই কর্তৃপক্ষ এমন দায়িত্বে পদায়ন করেছেন - যেটা সেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে "অতীব দায়িত্বপূর্ণ" হিসেবে "মোহরকৃত" পদগুলোর একটি। তবে সবাই বেতনের বেলায় আমাকে যা দিয়েছে- তা আর বলে কি হবে! যাকে বলে একেবারে 'লবঢঙ্কা' । না হলে এই বয়সে কি কারো দায় পরে - আবার পার্ট টাইম চাকুরী!

আমার এই নতুন চাকরিটায় যোগ দেওয়াতে আমার সদ্য নার্সারীতে ভর্তি হওয়া বড় পুত্র বেজায় খুশি। তার এতটাই খুশি যে- গত দু'রাত চুমুতে আমার গাল 'লাল'! হবেই বা না কেন, স্কুল টিফিন, চিপস আর মাঝেমধ্যে যদি দু-এক পিস কেক-টেক এসে যায়! এমন সুযোগে কেউ কী খুশি না হয়ে পারে! পারেনা।

ভাবছিলাম এই কাজটায় বেতন যাই হোক, কিছুটা সময় কাটানো আর অন্তত যাওয়া-আসার খরচটা তো উঠবে! আজ বুঝলাম সে আশায় জল পড়েছে। এই মালিকও আমাকে খাঁটিয়ে নেবে আর নিজের এ পকেটের পয়সা জাস্ট ও পকেটে নেবে। আর বলবে এইযে- 'এই তো বেতন দিলাম, দিলাম তো!' আসলে কানাকড়িটিও দিবে না। আর ব্যাটা দিবেই বা কোত্থেকে? ওর যা অবস্থা! ওর তো আমার থেকেও 'দেউলিয়াদশা'!


যাইহোক, সিদ্ধান্ত নিলাম, বেতন না থাক; পায়ে হেঁটে হলেও প্রতিদিন ফুলটাইম কর্মস্থলে যাবার পথে রবি থেকে বিষ্যুদবার অবধি- হপ্তায় পাঁচ দিন করে তিন মিনিট দূরত্বের এই চাকুরিটাও আমি চালিয়ে যাব। যাব এই আশায় - যে আজ বেতন না পেলেও ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে সুদেমুলে সব আমার ছেলে অন্তত পাবে; কারণ চাকুরিটা যে আমার প্রানপ্রিয় ছেলে ববা'কে স্কুলে পৌঁছে দেয়া!

ফেব্রুয়ারী-১১, ২০১৬ ইং। 

বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

উস্কানি তোমার জন্যে

আজও এক খানি গল্প লেখা হলো না আমার -
উস্কানি তোমার জন্যে।

মাথার মধ্যে যা আছে, যা আসে- সব তোমাকেই খুঁচিয়ে তোলে;
তাই ভয়ে মরি!
না! তুমি না আবার ক্ষেপে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসো কারো ধর্মদন্ডে!
তাই আজ আমি ভুলতে চাচ্ছি সত্য বলা-
উস্কানি তোমার জন্যে।

জন্মের সাধ ছিলো- একটি প্রেম, মাত্র একটি প্রেম করবো জীবনে; 
প্রিয়ার স্পর্শের অনুভব নিয়ে সোনালী বিকেলে হেঁটে বেড়াবো- 
দিগন্ত থেকে দিগন্তে; 
মুখোমুখি হয়ে- ঠোঁটের উষ্ণতায় কাটিয়ে দেবো প্রহরের পর প্রহর-
সেও তো দূর অস্ত - 
উস্কানি তোমার জন্যে।