শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

আজিকার শিশু

বেগম সুফিয়া কামাল
===========

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন, পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা'র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর। 


কবিতাটি বাংলার নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত বেগম সুফিয়া কামাল রচিত । তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের সন্তানদের কাছে তুলে ধরছি।

মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

প্রথম আলোতে চন্দ্রবিন্দু দুর্বৃত্তদের দখলে

আজও সেদিনটির কথা মনে আছে, ছোট বেলায় যখন শ -শ-ধ-র, স-হ-চ-র পার করে সবেমাত্র বানান করে শব্দগঠন শিখেছি, একদিন আবিষ্কার করলাম বইতে একটা বানান ভুল আছে। সাথে সাথে দিগ্বিজয়ী হাসি দিয়ে বাবার কাছে গেলাম-
- বাবা, দ্যাখো দ্যাখো বইতেও কিভাবে বানান ভুল লিখছে?
- বইতে আবার কী বানান ভুল লিখলো, বাবা! কই দেখাও তো! বাবার সহাস্য জিজ্ঞাসা।
- এই দ্যাখো এই। "তার" বানান লিখছে তাতে আবার ত -এ চন্দ্রবিন্দু দিছে! বলো এইটা কি ভুল না?
বাবাকে সেদিন বইয়ের বানান ভুল বের করে দেখিয়ে আমার এই মস্তবড় আবিস্কার দিয়ে কিঞ্চিত হলেও খুশি করতে পেরেছি বলে মনে মনে বেশ আমি বেশ খুশিই হয়েছিলাম, এখনও মনে আছে। মনে আছে বাবাও ছেলের এই আবিস্কারক মনোভাব দেখে কিছুটা খুশিই হয়েছিলেন। তবে এ-ও বলেছিলেন-

"বাবা, কিছু কিছু বানানে তিনি, তার, তাকে লিখতে চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়। এই চন্দ্রবিন্দু হলো ব্যক্তির সম্মান-মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য। যখন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-এর মত 'বিখ্যাত' ব্যক্তিকে বোঝাতে তাকে, তার, তিনি ব্যবহার করা হয়, তখন প্রথম বর্নের সাথে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হয়।"

এতদিন এটাই ছিল আমার কোন ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সম্মান বোঝাতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহারের গ্রামার। তবে আজই দেখলাম প্রথম আলো পত্রিকা একজন দুর্বৃত্তকেও চন্দ্রবিন্দুর সম্মানে ভূষিত করেছে। ঠিক বুঝলাম না দুর্বৃত্তদের নামের পরিবর্তে তাকে, তিনি, তার লিখতে চন্দ্রবিন্দু প্রয়োগের মাহাত্ম কী? এটা কী চন্দ্রবিন্দুর সম্মানহানি? না দুর্বৃত্তদের সামাজিক মর্যাদাবৃদ্ধি?