শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

আজিকার শিশু

বেগম সুফিয়া কামাল
===========

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন, পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা'র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর। 


কবিতাটি বাংলার নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত বেগম সুফিয়া কামাল রচিত । তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের সন্তানদের কাছে তুলে ধরছি।

মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

প্রথম আলোতে চন্দ্রবিন্দু দুর্বৃত্তদের দখলে

আজও সেদিনটির কথা মনে আছে, ছোট বেলায় যখন শ -শ-ধ-র, স-হ-চ-র পার করে সবেমাত্র বানান করে শব্দগঠন শিখেছি, একদিন আবিষ্কার করলাম বইতে একটা বানান ভুল আছে। সাথে সাথে দিগ্বিজয়ী হাসি দিয়ে বাবার কাছে গেলাম-
- বাবা, দ্যাখো দ্যাখো বইতেও কিভাবে বানান ভুল লিখছে?
- বইতে আবার কী বানান ভুল লিখলো, বাবা! কই দেখাও তো! বাবার সহাস্য জিজ্ঞাসা।
- এই দ্যাখো এই। "তার" বানান লিখছে তাতে আবার ত -এ চন্দ্রবিন্দু দিছে! বলো এইটা কি ভুল না?
বাবাকে সেদিন বইয়ের বানান ভুল বের করে দেখিয়ে আমার এই মস্তবড় আবিস্কার দিয়ে কিঞ্চিত হলেও খুশি করতে পেরেছি বলে মনে মনে বেশ আমি বেশ খুশিই হয়েছিলাম, এখনও মনে আছে। মনে আছে বাবাও ছেলের এই আবিস্কারক মনোভাব দেখে কিছুটা খুশিই হয়েছিলেন। তবে এ-ও বলেছিলেন-

"বাবা, কিছু কিছু বানানে তিনি, তার, তাকে লিখতে চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়। এই চন্দ্রবিন্দু হলো ব্যক্তির সম্মান-মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য। যখন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-এর মত 'বিখ্যাত' ব্যক্তিকে বোঝাতে তাকে, তার, তিনি ব্যবহার করা হয়, তখন প্রথম বর্নের সাথে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হয়।"

এতদিন এটাই ছিল আমার কোন ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সম্মান বোঝাতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহারের গ্রামার। তবে আজই দেখলাম প্রথম আলো পত্রিকা একজন দুর্বৃত্তকেও চন্দ্রবিন্দুর সম্মানে ভূষিত করেছে। ঠিক বুঝলাম না দুর্বৃত্তদের নামের পরিবর্তে তাকে, তিনি, তার লিখতে চন্দ্রবিন্দু প্রয়োগের মাহাত্ম কী? এটা কী চন্দ্রবিন্দুর সম্মানহানি? না দুর্বৃত্তদের সামাজিক মর্যাদাবৃদ্ধি?


শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫

সোহেলতাজের প্রত্যাবর্তনের খবর প্রসংগে কিছু কথা

দেশের অনলাইন কাগজগুলোয় প্রকাশ সজিব ওয়াজেদ জয় এর বিশেষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের রাজনিতিতে আবার সক্রিয় হচ্ছেন বংগতাজ পুত্র জনাব সোহেলতাজ। নিসন্দেহে এটা শুধু আওয়ামিলীগের জন্যই নয় বরং সমগ্র দেশবাসির জন্যই পরম এক আনন্দের খবর; কারন দেশবাসির প্রতি তাজ পরিবারের ডেডিকেশন কালের কষ্টিপাথরের বিচারে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পুর্ব থেকেই উত্তির্ণ।

অনুমান করতে পারি হাসিনাপুত্র জয়কে তাজপুত্র সোহেলতাজকে স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে প্রত্যাবর্তন করতে রাজি করাতে যথেষ্ট গলদ্ঘর্ম হতে হয়েছে। আর আশান্বিত হতে পারি জয়ের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বোধকরি বাংলাদেশের রাজনিতিতে জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের সক্রিয় অংশগ্রহন শুরু হলো, শুরু হলো আওয়ামিলীগের মধ্যে সংস্কার।

আমরা আরও আশা করতে পারি যে দলীয় সংস্কার জনাব জয় শুরু করেছেন তা অব্যহত থাকবে আর এর মাধ্যমে দলের অভ্যান্তরে স্বীয়স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে ব্যাপৃত মহীরুহ আকারধারণ করা আগাছাগুলো- যেগুলোর কারনেই সোহেলতাজের মত নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী নেতাকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যেতে হয়েছিল, সেগুলোকে সর্বাগ্রে মুলোতপাটিত করবেন। 

কারন, একজন সম্মানিত ব্যাক্তিকে সবাই সম্মান দেবেই এমনটি নাও হতে পারে, তবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে এনে অসম্মানিত করবেন, সেটি এদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী বলেই কারো কাছেই গ্রহনযোগ্য নয়।

সাধুবাদ জানাই জয়কে এই দুরদর্শি আর সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য। শুভকামনা জনাব সোহেলতাজকে, রাজনিতিতে তাঁর পরিবারের ত্যগের দৃষ্টান্ত দেশবাসিকে পুনরায় মনে করিয়ে দেবার জন্য।

গৌতম হালদার

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

দুটি ছবি ক’টি কথা


কালিহাতির পৈচাশিক ঘটনার প্রতিবাদে কাল তিনজন মানুষকে হত্যা করা হলো, আমি সেই “বর্বর” ঘটনাটি উল্লেখ করতে বিব্রত বোধ করি।



শুধু এ টুকুই বলবো, আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন অসংখ্য অনুরূপ ঘটনাকে কোনো অংশে খাটো করে দেখিনা, তবে কালিহাতির এই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার চেয়ে কোনো অংশে খাটো নয়, আমি সেটাই বলছি। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কী করে এই “বর্বর” কান্ড একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংঘঠিত হতে পারে, সেটা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে কুলোয় না!



আমার মনে হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে পাঞ্জাবি পশুদের রয়ে যাওয়া উত্তরসুরীরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই চারিত্রিক দোষাবলী এখনও বহন করে। ওরা পাকিস্তানিদের ধর্ষণকামী বির্যৌত্থিত উত্তরপুরুষ। গত পয়তাল্লিশ বছর ধরে এ সুজলা-সুফলা বাংলার জল-হাওয়া ওদের পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে নি। পারেনি মা আর মায়ের সম্ভ্রম রক্ষায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশের সন্তানেরা কতবড় ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, তার ধারণা ওদের অবর্জনাপুর্ন মস্তিস্কে ঢুকিয়ে দিতে।

কাজেই ওদের বিচারও হতে হবে বিশেষ ট্রাইবুনালে, নিয়মিত আদালতে নয়, এটাই সময়ের দাবি



সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভ্যাট বিষয়ে সরকারের ডিগবাজির মূল কারণ পুলিশ

একটু পিছনের দিকে খেয়াল করলেই আমরা দেখতে পাই জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলমান অর্থবর্ষে গত প্রায় আড়াই মাস ধরে টিউশন ফি এর বিপরীতে এই সারে সাত শতাংশ হারেভ্যাট বাবদ কর্তন হয়ে আসছিলো। নিঃসন্দেহে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়মিত জমাও হয়ে আসছিল। কারণ মূসক কর্তন করা হলে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারী হিসেবে জমা দিতে হয়, এটাই আইন।  সে হিসেবে যেহেতু আড়াই মাস আগে থেকে ভ্যাট কর্তনের হারটি কার্য্যকরী হয়েছে, সুতরাং তা এক কথায় রাষ্ট্রের কোষাগারে নিয়মিত জমা হত, সেটা ধরে নেওয়া অমূলক নয়। 


হা, একথাও ঠিক, একই সাথে আন্দোলনও চলছিলো। তবে প্রথম দিকে একটু জোড়ালো থাকলেও গত সপ্তাহের শুরু অবধি সে আন্দোলন ব্যাপক জনগোষ্ঠির সমর্থন পায়নি এবং তা ছিল অতি মাত্রায় দূর্বল। এক কথায় সেটা হয়ে পড়েছিল বিচ্ছিন্ন আন্দোলন। আর এই রকম আর কিছুদিন গেলে সে আন্দোলন মিয়িয়ে যেতো সেটা সকলের বোধগম্য।


কিন্তু বিপত্তিটা বাধলো কখন, যখন, গত সপ্তাহের শেষদিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায় আর বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সাথে জনৈক শিক্ষককে গুলিবিদ্ধ করে আহত করে। শিক্ষকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারে নি। মেনে নিতে পারার কথাও নয়।


আহত শিক্ষকের রক্তাক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়ে পরে "ভাইরাল"। ছড়িয়ে পরে সারা দেশে, দেশের বাইরেও।


ঠিক পরের দিনই আন্দোলন ব্যাপকতা পায়, ছড়িয়ে পড়ে বনানীর ভার্সিটি পল্লীতে, মিরপুরে, ধানমন্ডিতে, উত্তরায়। এর পরের দু-তিন দিন এখনও সবার চোখের সামনে ভাসছে। পুরো ঢাকা শহর প্রতিটি পল অনিশ্চয়ত আর আতংকের মধ্যে কাটিয়েছে, এই যেন কোথায় না কিভাবে আবার হিংসা ছড়িয়ে পড়ে! এই ভয়ে শহরবাসী ছিলেন ত্রস্ত। 


সুতরাং এ কথা খুবই স্পষ্ট, ইচ্ছে করেই হোক, সিদ্ধান্তের দুর্বলতার কারণেই হোক কিংবা কিছু সদস্যের অত্যুতসাহী ভূমিকার কারণেই হোক, ভ্যাট ইস্যুতে সরকারকে তার অবস্থান বদলাতে ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করছে পুলিশই !


প্রশ্ন হলো এইভাবে শহরবাসীকে গত চার-পাঁচ দিন ধরে যে আতঙ্কিত হয়ে প্র্রহর কাটাতে হলো কতিপয় পুলিশকর্মীর চাটুকারী সিদ্ধান্তের কারণে এর দায় কী পুলিশ নেবে কিংবা একটা চলমান আর গৃহীত ও স্বীকৃত সরকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করে সরকারকে যে হেনস্তা হতে হলে এর জন্য দায়ী পুলিশকর্মীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে না কেন?


রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

এতিমখানা ও দুটি প্রশ্ন!

কাগজে দেখছিলাম মাননীয় অর্থমন্ত্রী গত কয়েকদিন আগে কোথায় যেন বলেছেন "দেশে আর কোনো ভিক্ষুক নেই"। কোন তথ্য কিংবা জরিপের উপর নির্ভরতা নিয়ে জনাব মাল এই কথা বলেছেন, ঠিক জানা নেই। তবে কাঁচা-বাজার সব্জিবাজারের যে হালত! তাতে সহজেই অনুমেয় আসলেই দেশে কোনো ভিক্ষুক নেই, থাকার সুযোগ নেই। সেই অর্থে জনাব মাল যথার্তই বলেছেন, বলা চলে। কারণ দ্রব্যমূল্য যে স্তরে বর্তমানে বিরাজ করছে, তাতে দেশে কোনো "প্রকৃত ভিক্ষুক" থাকার কথা নয়, তারা হয় না খেতে পেয়ে মরে গেছে, না হয় মাননীয় বনমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন "বাংলার রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভারতে বেড়াতে গেছে", তেমনি প্রকৃত ভিক্ষুকরাও বেড়াতে গেছে কোনো না কোনো দেশে।

সে হতেই পারে, কাগজেই দেখছিলাম একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে কোনো কোনো ভিক্ষুক বায়ু পরিবর্তনের নিমিত্তে প্র্রতি তিনমাস অন্তর একবার করে "ওভারসিস ট্যুর" করেন। এরা আসলে "কমার্শিয়াল ভিক্ষুক"। ঢাকা শহরে এদের আনাগোনা কিংবা উপদ্রব যাই বলি না কেন? এখনও বেশ চোঁখে পড়ে। এইসব কমার্শিয়াল ভিক্ষুকরা যে এই পেশাতে বেশ ভালই কামাচ্ছেন সেটা বেশ পরিস্কার!

ঘটনা এগুলো নয়, ঘটনা হলো আর একটা!

দেশে এখন প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে "এতিম খানা"। আর অধিকাংশ এতিমখানায় কিছু লোক রাস্তার পাশে বসে, কখনো কখনো বাস ট্রেন কিংবা লঞ্চে উঠে চাঁদা সাহায্য চান। চাঁদা চান এতিমদের থাকা-খাওয়া ভরণ-পোষণ আর বইখাতা কেনার কথা বলে। কারণ চাঁদার টাকাই মূলত উতস এতিমদের পিছনে ব্যয় করার জন্য। আর চাঁদাবাজদের বয়ানে মুগ্ধ হয়ে, কিছুটা পরলৌকিক পুণ্য অর্জনের জন্য যে-যার সমর্থ্যানুসারে সাহায্যও করে থাকেন। তবে সারাদেশে এখন কতগুলো এতিমখানা আছে, আর এতে কত ছাত্র আছে, তার কোনো জড়িপ কোনকালে হয়েছে কী না জানা নেই! 

প্রশ্ন এতিম ছাত্র এলো কোথায় থেকে? দশ-পনেরো বছর আগেও তো দেশে এত এতিমখানা ছিলো না!

প্রশ্ন আরও একটা আছে, সেটা হলো পিতা-মাতাহীন অথবা পিতা-মাতা পরিত্যক্ত শিশুরা কি সবাই ছাত্র? অর্থাত এতিমরা কি সবাই পুরুষ হয়েই জন্মায়? যদিও সঠিক তথ্য নেই, তথাপি সারাদেশে যত সংখ্যক এতিমখানা ছাত্রদের নিয়ে পরিচালিত হয়, আমার তো মনে হয় তার এক দশমাংশও সংখ্যক এতিমখানা ছাত্রীদের নিয়ে পরিচালিত হয় না! তাহলে "ছাত্রী এতিম" কিংবা "এতিম ছাত্রী" নেই কেন? আর এতিমদরদী এইসব পরিচালকরাই বা কেন মেয়ে এতিমদের জন্য সমসংখ্যক এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করছেন না? বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, এর মধ্যে জটিল কিছু "কিন্তু" আছে! আর কিন্তুটা মূলত হলো লাভ-অলাভ-এর হিসেব।

তাহলে কী ধরে নেওয়া যায় না এতিমখানা পরিচালনা এখন একটা ভালো ব্যবসা? 

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমাদের বিবেকবোধ কী ধুঁয়ে যাচ্ছে?




এর থেকে বেদনাদায়ক চিত্র আর কী হতে পারে!



জানিনা। জানার ইচ্ছাও নেই। জানার ইচ্ছে নেই শিশুটি কোন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র কিংবা দেশের সন্তান? এটি একটি  নিস্প্রান আর অবোধ এই তিন বছরের শিশুর ছবি, এটাই সত্য। 


জানিনা আমাদের মানবিকতা, বিবেকবোধ আর মনুষ্যত্ব নিস্প্রাণ এই শিশুটির মতো প্রতিনিয়ত ধুঁয়ে ধুঁয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা? আমরা আর মানুষ থাকছি কিনা? জানিনা। জানার ইচ্ছেও করেনা। 

তবে শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে বিনীত প্রার্থনা, হে ঈশ্বর তুমি তোমার সৃষ্ট প্রতিটি শিশুর জীবন নিরাপদ আর নিস্কন্টক কর। 

তুমি তো সবই পার। 

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

শিক্ষকের মর্যাদা


কাজী কাদের নেওয়াজ
=================

বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”


[দু'টি কথা: সেই শিশু বয়সে পড়েছিলাম কবিতাটি, সবটুকু মনে ছিলো না। স্মৃতি হাতড়ে আর নেট ঘেঁটে পুরো কবিতাটি পেয়ে গেলাম। যদিও আজকের দিনে এইমতো পৌরানিক কবিতা নিতান্তই বে-রসা।  এখনকার সময়ে এসব কবিতার খাওতা নেই। এখনকার সময়ের বিষয়বস্তু নীতিশিক্ষা নয় বরং ক্ষমতাশিক্ষা। তাই তো সমাজের আজ এই দশা। 

সত্যি "লজ্জিত" বলা ছাড়া আর কী-ইবা বলার আছে?]

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কি সোনালী-বেসিক তাজা করতে?

আজ একটি অন্য রকম গল্প শোনাব।

"দুই হাজার ছয় সালের কথা। সদ্য বিয়ে করেছি, মেসের জীবন ছেড়ে, ছোট্ট একটা দেড় রুমের বাসা ভাড়া নেই। খিলগাঁও, গোরানে। বাড়ির মালিক ব্যাংকার। মালকিন বাড়ির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। পাঁচ তলা বাড়ির এক বারান্দার দেড় রুম আর আড়াই রুমের দুটি ইউনিট প্রতি তলাতে, আমরা পাঁচ তলাতেই ভাড়া নিলাম। পানি-গ্যাস আর বিদ্যুতসহ একুনে মাসিক ভাড়া আটাশ'শ টাকা। আমাদের নতুন সংসার, চুলো দু-বেলা জ্বলবে ঠিকই, তবে তা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। সারাদিন, আর সব ভাড়াটিয়ার মতো অত-অত রান্না-বাড়িও আমাদের হবে না! তবুও সরকারিভাবে গ্যাস বিল তো ফিক্সড! পানিও বাড়িওয়ালা সব ভাড়াটিয়ার জন্য দুইশো পঁচিশ টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমার ধারণা ছিলো, বিদ্যুত বিলটা আমাদের একশ টাকা মাসে আসবে কিনা সন্দেহ! স্বামী-স্ত্রী সকাল সাতটায় বেড় হবো, সন্ধ্যে সাতটা বা তারও পরে ফিরবো। তাছাড়া তখনো ফ্রিজ কেনা হয় নি। যা একটা টিভি আছে! তাও দেখার সুযোগ কই? ওই শুক্কুরবারে যা একটু দেখা! তাতে শ'টাকার বেশি বিল হবার কথা নয়। সব ফ্ল্যাটে তো ফ্রিজ ওভেন আয়রন চলবেই, কোনো কোনো ইউনিটে, বিশেষ করে যারা উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন, তারা কেউ কেউ এসি ও চালান। তাই আমাদের ঘাড়ে বিদ্যুত বিলটা টেনে ভাড়াটা যদি একটুও, অর্থাত দু-একশো টাকা কমানো যায়! বৌকে এক শুক্রবারে পাঠালাম মালকিনের সাথে কথা বলতে! বউ আলাপ সেরে ঘরে ফিরে ফ্রিজ আর ওভেন কেনার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলো দেখে ভাবলাম বোধ হয় 'চিড়ে ভিজে নি'। একটু বিস্তারিত জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতেই বউ বলে উঠলো, 'হ্যা, আগামী মাস থেকে আমাদের জন্য ভাড়া একশো টাকা কম। তবে আন্টি বলেছেন- তোমরা এসি ডিসি ফ্যান ফ্রিজ হিটার-মিটার আয়রন-মায়রণ ওভেন-টোভেন যা কিছু চালাও-চালাও, না চালাও-না চালাও, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের পুরো বাড়ির বিদ্যুত বিল ফিক্সড। কোনো কম দেবার সুযোগ নেই। তো তোমরা যা খুশি, যত্তো খুশি, সব কিছু চালাতে পারো। বলো! কেন ফ্রিজ কিনবোনা? কেন ওভেন কিনবোনা? ফ্রিজ আর ওভেন থাকলে তো প্রতিদিন আমার দু'বার করে চুলোয় পুড়তে হবে না!' বৌয়ের কথা শুনে আমার তো চক্ষু কপালে!"

সংসার জীবন শুরুর কথাগুলো বন্ধু চিন্ময় যখন বলছিলো তখন আমি তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। অবাক হয়েছিলাম ওর কথায়। তবে আকাশ থেকে পরছিলাম ও যখন বলল - 'জানিস ওই মিটার রিডার তিনটে ফ্ল্যাটের মালিক! তিনি স্যার মানুষ! বসে বসে অফিস সামাল দেন আর মাসিক বেতনে একজন লোক রাখা আছে, যার কাজ হলো প্রতিমাসে তার এলাকার গ্রাহকদের বিলের টাকা কালেকশন করা।'

মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছিলাম, কেন এত কষ্ট করে পড়ালেখা করলাম! তার চেয়ে বরং ঐ মিটার রিডারের মতো মামা-খালা-চাচা কাউকে ধরে-ক'য়ে ঐজাতীয় "উপরি" আয়ের একটা চাকরি মেট্রিক পাশ করার পরই জোটানোর জন্য কেন লেগে পরলাম না!

বন্ধুর কথা বাদ থাক, এবার নিজের অভিজ্ঞতার একটু প্রকাশ ঘটাই!

আমি বাসাবোতে দীর্ঘদিন আছি। গত দু'হাজার বারো'র জুলাইয়ে উঠেছি একটা নতুন বাসায়। আড়াই কাঠার প্লটটিতে সাতশো স্কয়ার ফিট, কী সামান্য কিছু বেশি হলেও হতে পারে! প্রতি ফ্লোরে দুটি করে ফ্ল্যাট । নতুন বাড়ি, ছ'তলা। এক ডেভলপার কোম্পানি বাড়িটি ফিফটি-ফিফটি শেয়ারে নির্মান করছে, কাজ তখনো শেষ হয় নি। আমরা প্রথম ভাড়াটিয়া। আমাদের হপ্তাখানেক আগে শুধু ল্যান্ডঅনার উঠেছেন। তিন তলায় ওনাদের মুখোমুখি আমাদের ফ্ল্যাট।

বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন, নির্মানকালীন কমার্সিয়াল লাইন ছিল। আর একটি ডাবল বার্ণার গ্যাসের লাইনের পারমিশন ছিলো। আমরা যেদিন উঠলাম, তড়িঘড়ি করে বাড়িওয়ালা অর্থাৎ ল্যান্ডওনার দোকান থেকে মোটা ধরনের বড় এক কয়েল প্লাস্টিক পাইপ নিয়ে আমাদের জন্য গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিলেন। মাস তিনেকের মধ্যে বাড়িতে মোট ন'টি পরিবার উঠলো, সবার গ্যাস লাইন আমাদের মতই, সরাসরি রাইজার থেকে প্লাস্টিক পাইপে পেলো। ল্যান্ডওনার গ্যাস বিল বাবদ এক পয়সাও বেশি নেন না, সবার কাছ থেকে সরকারী বিধিমোতাবেকই চারশো পঞ্চাশ টাকা করে উঠান! কিছু একটা বন্দোবস্ত করা আছে গ্যাস অথরিটির সাথে, বিল বাবদ সংগৃহিত অর্থ নিয়মিত ভাগ হয়। যার সুবাদেই অনুমোদনহীন ঝুলন্ত আর অতিরিক্ত লাইনগুলো আর কাটা পরে না। 


এবারে গালগল্প থাক। এই সুযোগে একটু অন্য কথায় আসি। বর্তমানে কম আলোচিত, গৌণ একটা বিষয়ে একটু নজর দেই!


সারাবিশ্বে খনিজ জ্জ্বলানিকে বলা হয় "লিকুইড গোল্ড" বা "তরল সোনা"। কারণ জ্বালানি ছাড়া সভ্যতা যেমন অচল, তেমনি খনিজ তেল ও গ্যাস ছাড়া জ্বালানির যোগান অসম্পূর্ণ। পৃথিবীতে মোট ব্যবহৃত জ্বালানির সিংহভাগ যোগান আসে খনিজ তেল আর গ্যাস থেকে। সে কারণেই খনিজ তেল গ্যাসই মূলত "লিকুইড গোল্ড" নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই লিকুইড গোল্ডের সারাবিশ্বে এখন দরপতন চলছে সলিড গোল্ডের মতই। অবস্থা এমন! গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম অবস্থানে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বর্তমান মূল্য। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য আরও কমতে পারে। বৈশ্বিক ভু-রাজনৈতিক সমীকরণ বিশ্লেষণে এমনই সম্ভবনা তৈরী হয়েছে।


কিন্তু আমাদের অবস্থা ভিন্নতর, গত বিষ্যুতবারের কথা। সরকার এক ঘোষণায়, হঠাত করে গ্যাস আর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছেন। গ্যাস বিলই এক ধাক্কায় দুইশো টাকা! বাড়িয়েছেন তো বাড়িয়েছেন! আবারও হাঁক পাড়ছেন, আবার দুই-তিন মাসের মধ্যে আবারও বাড়ানো হবে গ্যাস আর বিদ্যুতের দাম। এ যেন একেবারে মগের মুল্লুক! কথা বলবি, প্রতিবাদ করবি, তো মিটার বাড়তে থাকবে! আর কথাই বা বলবে কে? বিরোধিতা করারই বা কে আছে? সরকারী বেতনভুগিদের তো মুখে রা করার দরকার নেই! বেতন দ্বিগুন, তার উপর 'উপরি ইনকাম' তো আছেই! বেতনে হাত দেবার দরকার কী? আর বিরোধী দল! সে তো দূর্নীতির সাগরে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিজেই ডুবে মরার দশা! দু'এক টি কানা খোঁড়া দল যাও একটু চিতকার চেচামেচি করছে, তা সরকারের গা করার মত কিচ্ছুটি নয়। 


স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ বাজারে এই অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি কেন?

বর্তমান সরকারের অগণিত ভালো কাজের মধ্যে এমন কিছু খারাপ কাজ আছে, যা সমস্ত ভালো কাজকে ছাপিয়ে যায়। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক দূর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমলা-কর্মচারীদের দুর্নীতি মানুষের সহনশীলতাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। সরকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের অনেকেই দূর্নীতি আর লুট-পাটের অংশীদার হয়ে গাড়ি-বাড়িসহ বিলাসী জীবনযাপন করছে। পক্ষান্তরে মোট জনশক্তির নব্বইভাগেরও বেশি, যারা বেসরকারী ক্ষেত্রে কাজ করে জিডিপিতে সব থেকে বেশি অবদান রাখছে, তারা দিনকে দিন শুধু বঞ্চিতই হচ্ছেনা, সামাজিকভাবে সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের তুলনায় পিছিয়েও পড়ছে।

তাহলে কী এটাই ঠিক যে, পঁচানব্বই শতাংশের বেশি বেসরকারী চাকুরে আর অগনিত সাধরণ মানুষকে বাড়তি বিলের বোঝা চাপিয়ে আদায়কৃত অর্থ দিয়ে শুধুমাত্র বিলোও পাঁচ শতাংশ সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের, মিটার রিডার লাইনম্যানসহ দূর্নীতিবাজদের তোষণ আর বেসিক সোনালী ব্যাংকের লুট হওয়া টাকার ঘাটতিতে ধুঁকতে ব্যাংকগুলো তাজা করনের জন্য?


গৌতম হালদার

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

আমার কৈফিয়ত

কাজী নজরুল ইসলাম
==============
বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুজে তাই সই সবি !
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে !
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে –বাণী কই, কবি ?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী !
কবি বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা প’ড়ে শ্বাস ফেলে ।
বলে, কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাঁশ ঠেলে ।
পড়েনাক’ বই, ব’য়ে গেছে ওটা ।
কেহ বলে, বৌ-এ গিলিয়াছে গোটা ।
কেহ বলে, মাটি হ’ল হ’য়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে ।
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো, ফের যেন তুই যা’স জেলে ।
গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা ।
প্রতি শনিবারই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা !’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি-‌’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন, আড়ি চাচা !
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা !

মৌ-লোভী যত মৌলভী আর 'মোল-লারা' ক'ন হাত নেড়ে,
'দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে !'
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও !
'আম পারা'-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে !'
হিন্দুরা ভাবে, 'পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা'ত-নেড়ে !
আনকোরা যত ননভায়োলেন্ট নন্-কো'র দলও নন্ খুশী ।
'ভায়োলেন্সের ভায়োলিন' নাকি আমি, বিপ্লবী -মন তুষি ।
'এটা অহিংস', বিপ্লবী ভাবে,
'নয় চরকরা গান কেন গা'বে ?'
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কনফুসি !
স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি !
নর ভাবে , আমি বড় নারী -ঘেঁষা ! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী ।
'বিলেত ফেরনী ?' প্রবাসী বন্ধু ক'ন, এই তব বিদ্যে ছি !
ভক্তরা বলে, 'নবযুগ-রবি !'-
যুগের না হই, হুজুগের কবি
বটি তো রে দাদা , আমি মনে ভাবি, আর ক'ষে কষি হৃদ- পেশী,
দু'কানে চশমা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ'তেছে নিদ্ বেশী !
কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুন্ডু, আমিই কি বুঝি তার কিছু ?
হাত উঁচু আর হ'ল না তো ভাই, তাই লিখি ক'রে ঘাড় নীচু !


বন্ধু ! তোমরা দিলেনাক' দান,
রাজ-সরকার রেখেছেন মান !
যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব'লে অ-মূল্যে নেন ! আর কিছু
শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরেছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু ?

বন্ধু ! তুমিতো দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হল, শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন-বন্দীরে !
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তারে করিল বিকল,
তবু যদি কথা শুনে সে পাগল ! মানিল না রবি-গান্ধীরে !
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে !

আমি বলি, ওরে কথা শোন ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস খোশহালে !
প্রায় 'হাফ' নেতা হয়ে উঠেছিস, এবার এ দাঁও ফসকালে
'ফুল'-নেতা আর হবিনে যে হায় !
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা ! সেই তালে
নিস্ তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে ।

বোঝেনাক' সে যে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে
গান শুনে সবে ভাবে, ভাবনা কি ! দিন যাবে এবে পান খেয়ে ।
রবেনাক' ম্যালেরিয়া মহামারী,
স্বরাজ আসিছে চ'ড়ে জুড়ি-গাড়ী,
চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে ।
মাতা কয়, ওরে চুপ্ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্ চেয়ে !

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত , একটু নুন,
বেলা ব'য়ে যায়, খায়নিক' বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন ।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায় !
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছ কি ? কালি ও চুন
কেন ওঠেনাক' তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন ?
আমরা তো জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস ।
কত শত কোটী ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস
এল কোটী টাকা, এল না স্বরাজ !
টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ ।

মা'র বুক হতে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ, খাও হে ঘাস !
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ !
বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে,
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে,
রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসেনাক' মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে !
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে !
পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে ।
প্রার্থনা ক'রো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটী মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ ।
=======================================
তোমার কবিতায় তোমাকে বিনম্র শ্রদ্ধা, হে কালজয়ী কবি !

বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

উত্তরণের আছে কী কোনো পথ?

'ঘুড়ির হাতে বাঁশের নাটাই উড়তে থাকে ছেলে 
বড়শি দিয়ে মানুষ গাঁথে মাছেরা ছিপ ফেলে'


লাইন দু'টি মনে আছে। কে লিখেছিলেন, মনে নেই। সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত ছড়াকার ও কবি সুকুমার রায়ের লেখা। কবে পড়েছিলাম, তা মনে নেই। কোথায় পড়েছিলাম তাও মনে নেই। তবে তা বেশ মনে আছে, ছড়াটি যে আমাদের দেশের কোনো শ্রেণীতেই পাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। থাকবে কী করে? এখানে তো মানুষকে সরেষ আর সাহিত্যানুরাগী মানুষ বানানোর জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করার সুযোগ নেই। বরং এখানে দরকার ধর্ম ব্যবসার প্রসারের কলাকৌশল সম্বলিত ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারকে তো তাই করতে হবে। জনচাহিদা বলে কথা!

এসব আবোল তাবোল পড়ে লাভ কী? এখানে না আছে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন, না আছে উদারনৈতিক সাহিত্য আর মৌলিক শিক্ষার প্রয়োজন। এখনকার সময়ে আদর্শলিপি'র শিক্ষা "ঔ তে ঔদার্য্য অতি মহৎ গুণ" দেখানোর টাইম কই? তার বদলে "ক -তে কঠোর হও কসাইর মতো" মতো জীবনমুখী! ধর্মমুখী! বাস্তবমুখী! সৃজনশীল! কত কায়দার শিক্ষায় জাতি শিক্ষিত হচ্ছে!


যাক সে কথা, একটু ভাবলেই বোঝা যায় এদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোর ক্ষমতা কেন্দ্রিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতিগ্রস্থ আর সমাজবিরোধী অপশক্তিগুলির শক্তিমত্তা, আরও "প্রকাশযোগ্য নহে" এমন অসংখ্য অসংখ্য বিষয় বিবেচনায় নিলে শিশুতোষ আর মজার এ ছড়াটি এখন কী ভীষণ রকমের বাস্তব!

কথা একটাই, এর থেকে উত্তরণের আছে কী কোনো পথ?

সামু ব্লগে প্রকাশিত

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

আমি এখন কী করব?


বাজার করার সুযোগ খুব-একটা আমার হয়না। তবে দু-একদিন অফিস ছুটির পর ফিরতি পথে হাতের কাছে যা পাই, আর কিছু আকস্মিক প্রয়োজন - যা আমাদের ঘরে নেই, অথচ তখনই দরকার, এরূপ কোনো কেনাকাটার প্রয়োজন হলে কিনতে হয়। এর বাইরে কালে ভদ্রে, যদি ছেলেটি আমার বায়না ধরে, 'বাবা চলোনা! আজ তোমার সাথে বাজারে যাব'। তাহলে কাছাকাছি 'স্বপ্ন'। ব্যাস, এতখানিই আমার বাজার করার অভিজ্ঞতা!

আমি বেসরকারী চাকুরে। আমাকে অফিস করতে হয় ন'টা -পাঁচ'টা নয়, ন'টা-সাত'টা। কখনও কখনও নয়, প্রায়ই সেটা হয়ে যায় ন'টা - আট'টা কিংবা ন'টা-ন'টা। তার পর ঢাকা শহরের ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরতে ফিরতে কমসে-কম রাত দশ'টা কখনও কখনও এগারো'টাও হয়ে যায়। বাসায় ফিরে দেখি ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে কিংবা ঘুমের আয়োজনে আছে। আর সকালবেলা ন'টার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হলে অতি-অবশ্যই সাত'টা- বড়জোড় সাত-টা পনেরো'র মধ্যে বাসা থেকে বের হতেই হবে, নতুবা নির্ঘাত "লেট মার্ক"। 


এই যখন দিনপঞ্জি, তখন আর বাজার করি কখন? অনাচ-পাতি থেকে শুরু করে ছেলেদের, আমার জামা-প্যান্ট, গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া মোজা অবধি সব কেনাকাটা বিয়ের পর থেকেই ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিয়েছি বলা ঠিক নয়, বরং বলা ভালো ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। নিজের পছন্দ অপছন্দ রুচিবোধ সব সেই কবেই জলাঞ্জলি দিয়েছি! বিসর্জন দিয়েছি সামাজিক আচারানুষ্টানও। ভাগ্যিস মার্ক জুকারবার্গ ব্যাটা ফেসবুকটা বানিয়েছিল! নতুবা এতদিনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হয়ে যেতাম আমি "আফ্রিকান জঙ্গলের অধিবাসী"!

বলার অপেক্ষা রাখে না- সরকারী চাকুরেদের সুইপার থেকে শুরু করে উপরে সব শ্রেনীর কর্মকতাদের নিরানব্বই শতাংশই যেমনটি করে থাকেনযারা বেসরকারী চাকুরে, তাদের আটানব্বই শতাংশেরই "বাম ড্রয়ারে" কোনো কাজ হয় না, টাকা ঢুকে না, ঢোকার সুযোগ-ও থাকেনা। মাস শেষে যা স্যালারি! তা থেকেই চালিয়ে নিতে হয় পুরো মাস। এর বাইরে কোনো জরুরি প্রয়োজন! তো ঋণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। আবার ঋণ করলে শোধ দিতে গিয়ে পড়তে হয় মহাবিপদে! মাসের পর মাস মাসিক খরচ থেকে দু'টাকা - পাঁচ'টাকা করে বাঁচিয়ে তবেই না সম্ভব হয় ঋণ শোধ। 

এই যখন অবস্থা! তখন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন একলাফে দ্বিগুণ। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে জুলাই-১৫ থেকেই তাদের বেতন বর্ধিত হারে পাবেন; যার পরিবর্তন নিম্নরূপ;



এদিকে বেতন বৃদ্ধির খবরে বাজারে রীতিমতো আগুনের ছোঁয়াচ; একেবারে যুদ্ধকালীন অবস্থা যাকে বলে! যে ডিম পনের দিন আগে ছিল আশি-পঁচাশি টাকা ডজন- তা একলাফে একশকুড়ি -একশত্রিশ টাকা। বাজারে কাঁচাঝাল এখন কেজি দু'শো কুড়ি টাকা, পেয়াজ- নব্বই টাকা। এক কেজি পটল ষাট থেকে সত্তর টাকা, কাঁকরোল আশি টাকা, পেঁপে চল্লিশ, বরবটি ষাট। কেজি প্রতি পঞ্চাশ টাকার কমে কোনো সবজি কিনতে চাইলে বাজারে পাওয়া যাবেনা, যেতে হবে ভাগাড়ে। তবেই মিলতে পারে।

দ্রব্যমূল্য দিগুণ নয় চারগুণ- পাঁচগুণ হলেও সরকারী চাকুরেদের গায়ে লাগবে না, কারণ বেতন তো দ্বিগুণ হলোই! তার উপরে উপরি ইনকাম! প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তাদের কথা বাদই দিলাম, এই ঢাকা শহরে অনেক চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরও বাড়ি রয়েছে! তাও অনেকের আবার একটা নয়, একাধিক! অথচ যারা বেসরকারী চাকুরে, তাদের অনেকেই বাসাভাড়া দিতে দিতে আর ফিবছর বর্ধিত বাসাভাড়ার চাপ সহ্য করতে না পেরে কম ভাড়ার বাড়ি খুঁজে নিন্মমানের জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। পিছিয়ে পড়ছে সামাজিক গতিময়তা থেকে। দূরে সরে যাচ্ছে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে আর ছোট হতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। 

শুধু আমার কথাই বলছিনা, অধিকাংশ বেসরকারী চাকুরেদের এই বাজারে দুরাবস্থার কথা ভেবে সরকার কিছু একটা পদক্ষেপে নেবে, সেই ভাবনা নিঃসন্দেহে দিবাস্বপ্ন। অথচ দ্রব্যমূল্য, বর্ধিত বাসাভাড়া, প্রতিবেশী সরকারী চাকুরেদের অবৈধ আয়ে বিলাসী জীবন যাপন, সব মিলিয়ে বেসরকারী চাকুরেদের প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। জীবন এখন বিপন্ন এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সমাজে নির্দিষ্ট আর সীমিত আয়ের বেসরকারী চাকুরেদের জীবন ধরণের ন্যুনতম উপায়ই যখন অবশিষ্ট নেই- তখন আমার মতো অনেকের নিজের কাছে একটাই জিজ্ঞাস্য-

এখন আমি কী করব?



শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

ঝড়, নারী ও নর

ক্ষুদ্র জীবনেও অবশিষ্ট আগামী দিনগুলি নিয়ে আমার যত ভাবনা! 
দিনরাত উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলা, এ রাজ্য থেকে ভাবনার সে রাজ্যে;
কখনও আন্দোলিত হই, কখনও শিহরিত হই সুমুখে আলোক নাচন দেখে!
জীবন তো নয়, আমার কাছে 'সময়' যেন বয়ে চলা বিধ্বংশী ঝড়!
তুমি তো আছো বেশ!
এসবে তোমার আঁচ লাগেনা, এখন তোমার দুষ্টু সময়!

চতুর্মাত্রিক-এ প্রকাশিত

০৪ জুন-২০১৫ ইং 

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৫

প্রবীর সিকদার-এর হাজতবাসে যে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো !

প্রবীর সিকদার'রা সব সময়ে জাতির হিতার্থে নিবেদিত প্রাণ। তারা জাতির জন্য যা কিছু করে, মন থেকেই করে। কোন হালুয়া রুটির জন্য লোভাতুর হয়ে করে না।

তবে প্রবীর সিকদারদের সমস্যাটা হয় বারবার অন্য কারনে। নির্মোহ এই সিকদার'রা বারবারই ভুলে যায় এই বাংলাদেশে সবাই তার বা তাদের মতো ক্ষুধা তেষ্টা পরিহার করে বাচতে পারে না। সবার ক্ষিধে আছে। তেষ্টা আছে। আছে ক্ষমতায় যাবার, ক্ষমতা দেখানোর আর ক্ষমতা ধরে রাখার সতত চেষ্টা। আর এই কাজে প্রবীর সিকদারদের সততা নিসন্দেহে বড় বাধা।

তো! প্রবীর সিকদার'রা জেল খাটবেনা তো কী জেল খাটবে ক্ষমতালোভী, দখলদার, লুটেরা আর রাজাকাররা?

হতেই পারে না।

জেল খাটুক আর রিমান্ডেই থাকুক, যাই হোক না কেন; এ কথা দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, এত দিন যা ছিল কানাঘুষা, যা এতদিন সবাই আড়ালে আবডালে বলতো, তা আসলে শতভাগ নির্ভুল আর সূর্যালোকের মতো দীপ্ত। কারণ যদি এর মধ্যে বিন্দুমাত্রও কৃত্রিমতা থাকতো, তাহলে প্রবীর সিকদার-এর গ্রেফতার নিয়ে দেশের আপামর জনসাধারনের এই যে এত উত্কন্ঠা! এত উদ্বেগ! এসবের কিছুই থাকত না। 

যাক, এবার শান্তনা এটাই; শেখ হাসিনা'র সরকার যখন রাজাকারদের বিচার শুরুই করেছেন, শেষ একদিন না একদিন হবেই।

এই শেখ হাসিনা সরকার শেষ করতে না পারলেও পরের কোন না কোন সরকার নিশ্চয়ই শেষ করবে। অন্তত একটি রাজাকারও এই বাংলার মাটিতে বিনা বিচারে মাফ পেয়ে যেতে পারবে না, সেটাই বা কম কিসে!

বিডিনিউজ ব্লগে প্রকাশিত